১। মাটি শুকিয়ে ঝুরঝুরে করে নিবেন
২। জৈব সার, ভার্মি কম্পোষ্ট, বালু, নিমের খৈল, হাড়ের গুড়া, শিং কুচি ও কোকোপিট মাটির সাথে মিশিয়ে নিবেন। সব গুলি না থাকলে যত গুলি আছে মিশিয়ে নিবেন।
রাসায়নিক সার মেশাতে চাইলে একবস্তা মাটিতে ১ মুঠো করে ইউরিয়া, পটাস সার, ড্যাপ সার, ইপসম সল্ট মিশিয়ে নিতে পারেন। তবে এই সার মেশালে অন্তত ১৫ দিন পরে বীজ বা গাছ লাগাবেন।
৩। টবে অবশ্যই ছিদ্র থাকতে হবে। টবের নিচে প্রথমে পাথর বা ইটের খোয়া বা খোলন কুচি দিয়ে তার উপর ২ ইঞ্চি পরিমান বালু দিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে নিবেন টবের।
৪। তার উপর সার মিশ্রিত মাটি টবে দিয়ে টব ভরে দিবেন।
৫। টবের মাটিতে পানি দিয়ে টব পলিথিন দিয়ে কমপক্ষে ৭ থেকে ১৫ দিন বেধে রাখবেন। এর মধ্যে টবে বীজ বা চারা লাগানো উপযোগী হয়ে যাবে।
৮। তবে বীজ থেকে ছোট অন টাইম কাপে, সীডলিং ট্রেতে বা বীজ তলায় আগে শুধু ককোপিটে চারা করে নিলে পরে সেই চারা টবে রোপন করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়।
বীজ থেকে চারা করার সহজ পদ্ধতিঃ
৬ থেকে ১০ ঘন্টা গ্লাসে ভিজিয়ে রেখে পানি ছেকে মাটিতে বপন করে বেশি করে পানি দিয়ে তার উপর পেপার কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখবেন। দুই তিন দিন পর মাটিতে পানি শুকালে আবার অল্প পানি দিয়ে ঢেকে রাখবেন। যখন ১ টা বা ২ টা বীজ অংকুরিত শুরু হবে তখন পেপার কাগজ সরিয়ে আলো বাতাসে বা রোদে রাখবেন
মরিচ,টমেটো,বেগুন,ক্যাপসিকাম,পিয়াজ বা কপি জাতীয় সবজি গুলো কিভাবে জার্মিনেশন করবো।
প্রায় আমরা সবাই যারা বাড়ির আঙ্গিনায় বেলকনি ও ছাদ কৃষির সাথে সংযুক্ত সবাই এই ভুল গুলো করি!
🔸মরিচ,টমেটো,বেগুন,ক্যাপসিকাম,পিয়াজ বা কপি এই গুলোর চিরকূট টা একটু পাতলা হয়।
🔸আপনারা অনেক সময় এই গুলো ভিজিয়ে দেন।ভিজিয়ে দেওয়ার ফলে বীজ গুলো পছে যায়।এই ধরণের ভুল গুলো আর করবেন না।
🔸অরন্য সীডস-1 থেকে মরিচ, টমেটো,পিয়াজ বেগুন,কপি বা পাতলা যে বীজ গুলো আছে।সে গুলো নিয়ে প্রথমে হাল্কা ২/৩ ঘন্টা রোদে দিয়ে আবার ১ ঘন্টা ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে।
তারপর বীজ তলা অথবা সীট ট্রে তে আপনারা যেখানে দেন বীজ গুলো রোপন করে দিবেন।
🔸রোপণ করার পর আপনাদের মনে আরেকটা প্রশ্ন আসে কতদিন পর এটাকে আমরা মেইন ফিল্ডে অথবা টবে স্থানান্তর করবো।অনেক সময় ওয়েদার এর উপর ডিপেন্ড করে ২৫/৩৫ দিন এর ভিতর মূল জায়গায় স্থানান্তর করবো এতে করে চারা অনেক টা সতেজ ভাবে বেড়ে উঠে।৩০/৩৫ দিনে স্থানান্তর এর যোগ্য হয়ে যায়।
★মাচা জাতীয় সবজির ক্ষেত্রে যদি আমরা আসি★
🔸মিষ্টি কুমড়া,লাউ,বিন্দু লাউ,
ঝিঙ্গা ,চিচিংগা,করলা,শসা,বরবটি,সিম,তরমুজ এটা আবার ২/৩ ঘন্টা রোদে দিলেন। আবার ১ ঘন্টা ছায়ায় রেখে দিবেন।
🔸চাইলে সরাসরি মেইন ফিল্ডে বা টবে দিতে পারেন আবার চাইলে সীড ট্রে তে বীজ তৈরী করে নিতে পারেন।
🔸যখন আপনারা চারা করবেন তখন এটা মাথায় রাখবেন যে সব বীজ ভিজানো দরকার নেই।যেমন মোটা সীডস যে গুলো করলা ঝিঙ্গা অথবা চিচিঙ্গা এই গুলো ২/৩ ঘন্টা ভিজিয়ে দিতে পারেন।আবার না ভিজালেও হয় এটা কোন সমস্যা নেই।
🔸তরমুজ এর ক্ষেত্রে মনে রাখবেন ৫/৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে চটের যে বস্তা গুলো আছে সেটার ভিতর মুড়িয়ে আপনার বাসার যে তোশক টা আছে অথবা গরম কোন জায়গায় রেখে দিবেন অংকুরিত হওয়া পর্যন্ত হাল্কা অংকুরিত হলে নিয়ে নিবেন।চাইলে গোবরের স্তুপেও রেখে দিতে পারেন।খেয়াল রাখবেন এটা যেনো কাচা গোবরের স্তপ না হয় অবশ্যই শুকনা গোবর হতে হবে।
🔸মাচা জাতীয় সবজির ক্ষেত্রে ১৫/২০ দিনের ভিতর সীডস স্ট্রে থেকে মেইন জায়গায় টবে অথবা মাঠে স্থানান্তরিত করতে হবে।গ্রীস্মকালে এটা ১৫ দিনের মধ্যেই হয়ে যায়। তবে যখন হাল্কা ঠান্ডা ঠান্ডা ৫ দিন একটু লেট হয় ১৫/২০ দিনের ভিতর উপযোগী হয়ে উঠে।
★কন্দ জাতীয় সবজি★
গাজর,বীটরুট,ওল কপি,মুলা এই গুলো সরাসরি মুল জমিতে মাঠি প্রস্তুত করে লাগাতে পারেন।তিবে গাজর মুলার ক্ষেত্রে একটু খেয়াল রাখবেন মাটি টা যদি ঝরঝর না হয় তাহলে ফলের আকৃতি সুন্দর হয় না।
★ধনিয়া পাতার ক্ষেত্রে★
🔸১০/১২ ঘন্টা সীডস টা ভিজিয়ে নিতে হবে এর পর সরাসরি রোপণ যোগ্য স্থানে চিঠিয়ে দেন।অথবা লাইন করে দিন।
বিঃ দ্রঃ অনেক সময় আপনাদের প্রশ্ন থাকে হাইব্রিড সীডস গুলো শোধন করা থাকে নাকি থাকে না?
👉সত্যি বলতে বেশির ভাগ সময় হাইব্রিড বীজ গুলো কোডিং করা থাকে এবং শোধন করা থাকে অনক সময় যারা চাষ সম্পর্কে জেনে করতে চায় তারা
🪴১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম কার্বান্ডাজিম গ্রুপের যেকোম ওষুধ নিয়ে ওটাকে গোলে ০.৩০ অথবা ১ ঘন্টা রেখে অইটাকে সীডস ট্রে তে অথবা বীজ তলায় দিতে পারেন তখন বীজ আরো পরিপূর্ণ ভাবে তৈরী হয়
ছাদকৃষির জন্য এক ডজন টিপস
ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।
২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।
৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।
৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।
৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।
৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।
৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।
১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।
১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।
১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।